২৯ মে ২০২৫ সন্ধ্যা – বিস্তারিত আবহাওয়ার আপডেট
২০২৫ সালের ২৯ মে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গসহ পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের একাধিক জেলায় হঠাৎ করে সক্রিয় হয়ে ওঠে প্রাক-বর্ষার ঝড়-বৃষ্টি। বিকেলের পর থেকেই মেঘ জমতে শুরু করে, আর সন্ধ্যার দিকে দেখা যায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ প্রবল বৃষ্টিপাত, দমকা হাওয়া এবং কোথাও কোথাও হালকা জলাবদ্ধতার দৃশ্য। বিশেষ করে কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, শিলিগুড়ি, গৌহাটি এবং ভুবনেশ্বর-এ চোখে পড়ার মতো আবহাওয়া পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এটি ছিল একটি ক্লাসিক প্রাক-বর্ষার সন্ধ্যা, যা বর্ষার আগমনের ইঙ্গিত বহন করে।
🌩️ আবহাওয়ার প্রধান বৈশিষ্ট্য – ২৯ মে (সন্ধ্যা)
- ⛈️ বজ্রঝড়: দক্ষিণবঙ্গের বহু অঞ্চলে বিকেলের পরপরই বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির শুরু হয়।
- 🌧️ বৃষ্টিপাত: হালকা থেকে মাঝারি এবং কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, নদীয়া, মালদা ও কোচবিহারে বৃষ্টি ছিল উল্লেখযোগ্য।
- 💨 দমকা হাওয়া: সন্ধ্যা ৫টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে ৪০–৬৫ কিমি/ঘণ্টা বেগে বাতাস বয়ে গেছে বেশ কিছু অঞ্চলে।
- ⚡ বজ্রপাত: শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, তেজপুর এবং মালদা অঞ্চলে মাটি ছোঁয়া বজ্রপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
📍 অঞ্চলভিত্তিক রিপোর্ট
কলকাতা ও আশেপাশের এলাকা
কলকাতা শহরে বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে হঠাৎ করে গাঢ় মেঘে ঢেকে যায় আকাশ। সন্ধ্যা ৫টার পরপরই শুরু হয় প্রবল দমকা হাওয়া ও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত। গড়িয়াহাট, বেহালা, সল্টলেক এবং নিউ টাউনের বিভিন্ন এলাকায় জল জমে যায়। দিনের তাপমাত্রা যেখানে ৩৬.৪° সেলসিয়াস ছিল, বৃষ্টির পর তা নেমে আসে ২৮.১°-তে। অনেকে রাস্তায় আটকে পড়েন, বাস ও অটো চলাচলে দেরি হয়।
উত্তরবঙ্গ
শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং অঞ্চলে বিকেলের পর থেকেই ঘন মেঘ জমে। সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহূর্তে শুরু হয় তুমুল বজ্রঝড় এবং ভারী বৃষ্টি। পাহাড়ি অঞ্চলে কুয়াশার মতন ঘন মেঘে দৃষ্টিসীমা কমে আসে। শিলিগুড়িতে মাত্র ৪৫ মিনিটে ২৫.৩ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
দক্ষিণবঙ্গ
মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া প্রভৃতি অঞ্চলে বজ্রবিদ্যুৎ সহ ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। অনেক স্থানে গাছপালা পড়ে যায়, কিছু বিদ্যুৎ বিভ্রাটও দেখা গেছে। পূর্ব মেদিনীপুরের দীঘা উপকূলে সন্ধ্যার পর কিছুটা সাগর উত্তাল হয়ে ওঠে, এবং সতর্কতা জারি করা হয় স্থানীয় প্রশাসনের তরফে।
উত্তর-পূর্ব ভারত
গৌহাটি, দিসপুর, তেজপুর, ডিব্রুগড় সহ অসম ও মেঘালয়ের বেশ কিছু অঞ্চলে প্রবল বজ্রপাত, দমকা হাওয়া এবং হালকা বৃষ্টিপাত হয়। কিছু নিচু এলাকায় জল জমে যায়। যদিও বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
ওড়িশা
ভুবনেশ্বর ও পুরীর উপকূলে সন্ধ্যার দিকে মেঘাচ্ছন্ন অবস্থা তৈরি হয়। কিছু অংশে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়।
🛰️ স্যাটেলাইট ও রাডার পর্যবেক্ষণ
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের INSAT-3D স্যাটেলাইট চিত্র অনুযায়ী সন্ধ্যা ৬টার দিকে বঙ্গোপসাগর থেকে একটি শক্তিশালী মেঘপুঞ্জ পূর্ব ভারতে ঢোকে, যা পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা জুড়ে সক্রিয় ঝড় সৃষ্টি করে। রাডার ইমেজে দক্ষিণবঙ্গে একাধিক বজ্রঝড়ের সেল লক্ষ্য করা যায়।
🌡️ তাপমাত্রার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন
শহর | বিকাল ৩টা | সন্ধ্যা ৬টা | পতন (°C) |
---|---|---|---|
কলকাতা | 36.4°C | 28.1°C | −8.3°C |
শিলিগুড়ি | 34.8°C | 29.5°C | −5.3°C |
গৌহাটি | 33.2°C | 26.4°C | −6.8°C |
ভুবনেশ্বর | 35.1°C | 30.2°C | −4.9°C |
📢 জনসাধারণের প্রতি পরামর্শ
- বজ্রপাত চলাকালীন খোলা জায়গা এড়িয়ে চলুন।
- তড়িতাহত হওয়ার ঝুঁকি থাকায় গাছের নিচে অবস্থান করবেন না।
- মোবাইল ফোন চার্জ করে রাখুন এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
- মোটরবাইক বা বাইসাইকেলে চলাচল যতটা সম্ভব স্থগিত করুন ঝড়ের সময়ে।
- উপকূলীয় জেলায় যারা মাছ ধরতে যান তাদের জন্য সতর্কতা জারি রয়েছে।
📌 স্থানীয় পর্যবেক্ষণ ও রিপোর্ট
কলকাতার গড়িয়াহাট, সল্টলেক ও নিউ আলিপুর অঞ্চলে রাস্তার কিছু অংশে জল জমে যায়। মালদা ও নদীয়ার কিছু অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে। শিলিগুড়িতে দুটি ছোট গাছ রাস্তার ওপর পড়ে যায়, যদিও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই।
অফিস ফেরত অনেকেই রাস্তায় আটকে পড়েন, অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়ে অপেক্ষা করেন ঝড় থামার জন্য।
🎙️ বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
ড. অনিরুদ্ধ মিত্র, IMD কলকাতার আবহাওয়াবিদ বলেন:
“এ ধরনের বজ্রঝড় এই সময়ে খুব স্বাভাবিক। এটি মূলত প্রাক-বর্ষার ফলাফল যেখানে বঙ্গোপসাগর থেকে আসা জলীয় বাষ্প স্থানীয়ভাবে উত্তপ্ত স্থলভাগের সঙ্গে মিশে অস্থায়ী কিন্তু প্রবল ঝড় সৃষ্টি করে।”
🌧️ বর্ষা কবে আসবে?
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বর্ষা আগামী ৪–৬ জুনের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গ ও ওড়িশা অঞ্চলে প্রবেশ করতে পারে। আজকের মতো আবহাওয়া পরিবর্তন বর্ষার আগমনের স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে। কৃষকদের জন্য এখনই প্রস্তুতি নেওয়ার সময়, বিশেষ করে ধানের বীজতলা প্রস্তুত করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
✅ উপসংহার
২০২৫ সালের ২৯ মে সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে যে আবহাওয়া পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা ছিল একদম বাস্তবধর্মী প্রাক-বর্ষার অভিজ্ঞতা। হঠাৎ বৃষ্টি, দমকা হাওয়া এবং বিদ্যুতের ঝলক যেমন মুহূর্তের জন্য স্বস্তি এনেছে, তেমনি অনেকে পড়েছেন বিড়ম্বনায়। আগামী দিনে আরও এমন কিছু ঝড়-বৃষ্টির পরিস্থিতি দেখা যেতে পারে, তাই সচেতন থাকা এবং প্রশাসনের দিকনির্দেশ মেনে চলাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
দায়িত্ব অস্বীকার: এই প্রতিবেদনে উপস্থাপিত সমস্ত তথ্য সরকারি আবহাওয়া রিপোর্ট, বাস্তব পর্যবেক্ষণ ও স্থানীয় সূত্রের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এটি কল্পনাপ্রসূত বা অতিরঞ্জিত নয়। যেকোনও জরুরি পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসনের পরামর্শ মেনে চলুন।