ISRO: ভারতের মহাকাশ গবেষণার পথপ্রদর্শক
প্রকাশিত: ২৭ জুন ২০২৫ | LikeTvBangla রিপোর্ট
আজকের আপডেট: ISRO-এর সাম্প্রতিক অগ্রগতি
২০২৫ সালের ২৭ জুন তারিখে সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী, ISRO বর্তমানে Gaganyaan মিশনের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের শেষ ধাপে রয়েছে। তিনজন ভারতীয় মহাকাশচারীর মহাকাশ যাত্রার জন্য সমস্ত প্রস্তুতি প্রায় সম্পূর্ণ। আশা করা যাচ্ছে, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসেই এই ঐতিহাসিক উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হবে।
এছাড়া, সম্প্রতি ISRO একটি নতুন Earth Observation স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষেপণ করেছে যা কৃষি, দুর্যোগ পূর্বাভাস ও ভূমি ব্যবহার বিশ্লেষণে বড় ভূমিকা রাখবে। চন্দ্রযান-৩-এর অরবিটারও এখনো সক্রিয় এবং বৈজ্ঞানিক তথ্য পাঠিয়ে চলেছে, যা চাঁদের দক্ষিণ মেরু নিয়ে গবেষণায় সহায়ক হচ্ছে।
ISRO-এর সূচনা ও ড. বিক্রম সারাভাইয়ের স্বপ্ন
১৯৬৯ সালের ১৫ আগস্ট ISRO-এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এর আগে Indian National Committee for Space Research (INCOSPAR) নামে একটি সংস্থা মহাকাশ গবেষণার ভিত্তি স্থাপন করেছিল। কিন্তু ISRO প্রতিষ্ঠার পেছনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন ড. বিক্রম সারাভাই। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, মহাকাশ প্রযুক্তি কেবলমাত্র সামরিক বা বৈজ্ঞানিক অর্জনের জন্য নয়, বরং সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্যও ব্যবহার হওয়া উচিত।
আর্যভট্ট থেকে আত্মনির্ভরতা
ISRO-এর প্রথম সাফল্যের গল্প শুরু হয় ১৯৭৫ সালে, যখন তারা ‘আর্যভট্ট’ নামক প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাহায্যে। এটি ছিল ভারতের প্রথম উপগ্রহ, এবং এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
এরপর, ধাপে ধাপে ISRO নিজেদের উৎক্ষেপণ প্রযুক্তি উন্নত করতে থাকে। প্রথমে SLV (Satellite Launch Vehicle), পরে ASLV (Augmented SLV), তারপর আসে PSLV ও GSLV। এই উৎক্ষেপণযন্ত্রগুলো তৈরি করে ISRO আজ বিশ্বমানের উৎক্ষেপণ সংস্থায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে PSLV তার নির্ভরযোগ্যতার জন্য আন্তর্জাতিক মহলে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
মঙ্গলযান: ভারতের গর্ব
২০১৩ সালে ISRO ইতিহাস সৃষ্টি করে যখন তারা মঙ্গলযান (Mars Orbiter Mission) সফলভাবে উৎক্ষেপণ করে। এটি ছিল ভারতের প্রথম আন্তঃগ্রহ অভিযান এবং প্রথম চেষ্টাতেই সফল হয়। এই অর্জন একদিকে যেমন বৈজ্ঞানিক শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক, তেমনি অর্থনৈতিক দিক থেকেও এক অনন্য উদাহরণ। কারণ মাত্র ৭৪ মিলিয়ন ডলার খরচে এই মিশন সফল করা হয়, যেখানে অন্য দেশের তুলনায় খরচ ছিল বহুগুণ বেশি।
চন্দ্রযান অভিযান: ব্যর্থতার মধ্যেও সাফল্য
ISRO-এর চন্দ্রযান প্রকল্পও যথেষ্ট প্রশংসিত। ২০০৮ সালে চন্দ্রযান-১ চাঁদের পৃষ্ঠে জলবিন্দুর অস্তিত্ব খুঁজে পেয়ে চমক সৃষ্টি করে। যদিও ২০১৯ সালের চন্দ্রযান-২ মিশনের অবতরণকারী অংশ সফল হয়নি, তবে তার অরবিটার এখনো কার্যকরভাবে তথ্য পাঠিয়ে যাচ্ছে।
২০২৩ সালে চন্দ্রযান-৩ মিশনে ISRO চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফল অবতরণ করে, যা বিশ্বের প্রথম। এটি কেবল ভারতের নয়, পুরো মানবজাতির জন্য এক বিশাল অর্জন।
NavIC: ভারতের নিজস্ব নেভিগেশন ব্যবস্থা
বিশ্বব্যাপী GPS-এর বিকল্প হিসেবে ISRO তৈরি করেছে NavIC (Navigation with Indian Constellation)। এটি ভারতের নিজস্ব ন্যাভিগেশন সিস্টেম, যা ভূমিকম্প, সুনামি, সামুদ্রিক চলাচল এবং জরুরি পরিস্থিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সাধারণ মানুষের জীবনে ISRO-এর প্রভাব
ISRO কেবলমাত্র মহাকাশ অভিযানেই সীমাবদ্ধ নয়। তারা উপগ্রহ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের জীবন উন্নয়নে কাজ করে চলেছে। উদাহরণস্বরূপ:
- আবহাওয়ার সঠিক পূর্বাভাস
- কৃষি পর্যবেক্ষণ ও জমির মান নির্ধারণ
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও উদ্ধারকাজ
- দূরবর্তী শিক্ষার (টেলি-এডুকেশন) ব্যবস্থা
- টেলি-মেডিসিন, যেখানে গ্রামের মানুষ শহরের ডাক্তারদের সেবা পায়
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ISRO-এর অবদান
আজ ISRO কেবলমাত্র ভারতীয় মিশনে সীমাবদ্ধ নয়। তারা বিশ্বের বহু দেশের উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে থাকে। NASA, ESA (European Space Agency), Roscosmos, JAXA-এর মতো আন্তর্জাতিক মহাকাশ সংস্থার সঙ্গে তারা বিভিন্ন যৌথ প্রকল্পে কাজ করে। ISRO-এর বাণিজ্যিক শাখা Antrix Corporation এবং NewSpace India Ltd-এর মাধ্যমে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক উৎক্ষেপণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
ভবিষ্যতের লক্ষ্য: Gaganyaan ও আরও অনেক কিছু
ISRO ভবিষ্যতে আরও উচ্চতর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো Gaganyaan মিশন, যেখানে ভারত প্রথমবারের মতো মহাকাশে মানুষ পাঠাবে। এই মিশনে ভারতীয় মহাকাশচারীরা পৃথিবীর কক্ষপথে ৫ থেকে ৭ দিন অবস্থান করবেন।
এছাড়াও পরিকল্পনায় রয়েছে শুক্রগ্রহে অভিযান, মঙ্গল মিশন-২, এবং চন্দ্রযান-৪ মিশন। ISRO-এর লক্ষ্য কেবল প্রযুক্তির উন্নয়ন নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মহাকাশ বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করে তোলা।
ISRO: আত্মনির্ভর ভারতের প্রতিচ্ছবি
ISRO-এর প্রতিটি সফল উৎক্ষেপণ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সীমিত সম্পদেও বিশাল সাফল্য সম্ভব। এটা ভারতের সেই প্রতিচ্ছবি, যেখানে অধ্যবসায়, মেধা, এবং দেশপ্রেম একসঙ্গে কাজ করে।
আজ বিশ্ব ISRO-কে কেবল একটি স্পেস এজেন্সি হিসেবে নয়, বরং একটি অনুপ্রেরণার নাম হিসেবে জানে। যারা সীমিত বাজেটেও সীমাহীন স্বপ্ন দেখতে জানে। যারা ব্যর্থতাকে শিক্ষার মাধ্যম বানিয়ে আবারও উঠে দাঁড়াতে পারে।
সংক্ষেপে: ISRO আজ ভারতের গর্ব। এটি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, এবং মানব কল্যাণে এক অনবদ্য প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন আমরা যে আবহাওয়ার খবর দেখি, GPS ব্যবহার করি, কিংবা দুর্যোগে সহায়তা পাই—তার অনেকটাই ISRO-এর অবদান। ভবিষ্যতের আরও বড় সাফল্যের অপেক্ষায় রইল সারা দেশ।
সূত্র: ISRO.gov.in, NASA.gov, এবং Times of India প্রতিবেদনের তথ্যের ভিত্তিতে
আরও পড়ুন: www.liketvbangla.com