সকাল ও সন্ধ্যায় ৫টি সহজ আমল – আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে এক সহজ পদক্ষেপ
আমাদের ব্যস্ত জীবনের প্রতিদিনের সকাল আর সন্ধ্যা যেন এক অনির্বাণ ছুটে চলা। কখনো চাকরি, কখনো পড়াশোনা কিংবা সংসারের কাজে ব্যস্ত থাকায় আমরা ভুলে যাই জীবনের আসল উদ্দেশ্য – আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। অথচ কুরআন ও হাদীসে বারবার বলা হয়েছে, সকাল ও সন্ধ্যার আমল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বরকতপূর্ণ।
এই লেখায় আমরা জানব এমন ৫টি সহজ আমল যা আপনি প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় মাত্র কয়েক মিনিটে করতে পারেন, কিন্তু এর প্রতিদান অনন্তকালের জন্য আল্লাহর কাছে জমা হবে। আসুন জেনে নিই।
🕊️ ১. সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবর পাঠ
হযরত ফাতিমা (রা.) কে রাসূল (সা.) একটি বিশেষ আমল শিখিয়েছিলেন –
- ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ
- ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ
- ৩৪ বার আল্লাহু আকবার
এটি বলা যায় “ফাতিমার তাসবীহ” নামে। এটি সকাল ও সন্ধ্যায় কিংবা ঘুমানোর আগে পড়া অত্যন্ত ফজিলতের কাজ। এতে মনে প্রশান্তি আসে এবং আল্লাহর জিকির হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলে।
“তোমরা কি তোমাদের বিছানায় যাওয়ার সময় এমন কিছু শিখবে না যা তোমাদের জন্য খাদেমের চেয়েও উত্তম?” – (বুখারী)
🛡️ ২. আয়াতুল কুরসি পাঠ করা
সুরা আল-বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত – আয়াতুল কুরসি – ইসলাম ধর্মের অন্যতম শক্তিশালী ও নিরাপত্তাদায়ক আয়াত। হাদীসে বলা হয়েছে:
“যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশে কোন বাধা থাকবে না।” – (নাসাঈ)
সকাল ও সন্ধ্যায় একবার করে পড়লে আল্লাহর পক্ষ থেকে রুহানী নিরাপত্তা পাওয়া যায়। জ্বিন, শয়তান, হিংসা বা কুদৃষ্টি থেকেও আল্লাহ হেফাজত করেন।
🌅 ৩. সকাল ও সন্ধ্যার দোয়া পাঠ করা
রাসূল (সা.) আমাদের বিভিন্ন সময়ের জন্য বিশেষ দোয়া শিখিয়েছেন। এর মধ্যে সকাল ও সন্ধ্যার দোয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন:
সকালের দোয়া:
اللهم بك أصبحنا، وبك أمسينا، وبك نحيا، وبك نموت، وإليك النشور
“হে আল্লাহ! আপনার ইচ্ছাতেই আমরা সকাল করেছি, সন্ধ্যা করেছি, জীবিত থাকি এবং মৃত্যুবরণ করব; আপনারই দিকে প্রত্যাবর্তন করব।” – (তিরমিজি)
সন্ধ্যার দোয়া:
أمسينا وأمسى الملك لله، والحمد لله
“আমরা সন্ধ্যা পেয়েছি এবং আল্লাহরই রাজত্বে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।” – (আবু দাউদ)
এই দোয়াগুলো হৃদয় ও মুখস্থ রাখলে প্রতিদিন মাত্র ১-২ মিনিট সময়েই আল্লাহর স্মরণে থাকা যায়। এতে আত্মা শান্ত থাকে এবং দিন কাটে আল্লাহর স্মরণে।
🤲 ৪. ইস্তিগফার ও তওবা
“আস্তাগফিরুল্লাহ” – এই একটি বাক্য হৃদয় থেকে দিনে ১০০ বার বললেই অনেক গুনাহ ক্ষমা হয়ে যায়। হাদীসে রাসূল (সা.) বলেছেন:
“আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে সত্তরবার, অন্য বর্ণনায় একশবার ইস্তিগফার করি।” – (বুখারী)
সকাল ও সন্ধ্যায় সময় করে ১০০ বার ইস্তিগফার পড়লে আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফ চাওয়া হয় এবং আত্মার প্রশান্তি পাওয়া যায়।
বিশেষ দোয়া:
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي، وَأَنَا عَبْدُكَ...
(“Sayyidul Istighfar” – সর্বশ্রেষ্ঠ ইস্তিগফার)
🕊️ ৫. দুরুদ শরীফ পাঠ করা
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি দুরুদ পাঠ করা আমাদের ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। এতে আল্লাহ আমাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং জান্নাতের পথ সুগম হয়।
হাদীসে আছে:
“যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দুরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার ওপর দশটি রহমত বর্ষণ করেন।” – (মুসলিম)
সকাল ও সন্ধ্যায় যতটা সম্ভব বেশিবার দুরুদ পড়ার চেষ্টা করুন। এটি একটি এমন আমল, যার কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ নেই, যত বেশি পাঠ করবেন তত বেশি ফজিলত পাবেন।
➕ অতিরিক্ত বরকতময় আমল
- সুবহানাল্লাহি ওবিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম: এটি ১০০ বার বললে জান্নাতের একটি গাছ রোপণ হয়।
- সুরা ইখলাস ৩ বার: কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পাঠের সমান সওয়াব।
- সুরা ফালাক ও নাস: সকাল ও সন্ধ্যায় পড়লে যাবতীয় অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
✅ উপসংহার
আমাদের প্রতিদিনের ব্যস্ততার মাঝেও সকাল ও সন্ধ্যার এই সহজ ৫টি আমল যদি আমরা অভ্যাসে পরিণত করতে পারি, তবে আমাদের জীবনে ঈমানি আলো ছড়িয়ে পড়বে। এগুলো এমন কিছু কাজ যা শুধু দুনিয়াতেই নয়, আখিরাতে অসীম প্রতিদান এনে দিতে পারে।
আসুন, প্রতিদিন নতুন এক সূর্যোদয়ের সাথে নিজেকে একটু আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে নেই – দোয়া, ইস্তিগফার আর ভালো আমলের মাধ্যমে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দিন। আমিন।
দায়িত্ব অস্বীকার: এই পোস্টটি কুরআন ও সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে সাধারণ ধর্মীয় শিক্ষার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। কোনো বিভ্রান্তিকর বা গড়া তথ্য এতে নেই। ইসলামি মাসায়েল নিয়ে বিস্তারিত জানতে প্রয়োজনে আলেমের সঙ্গে পরামর্শ করুন।