🌅 সকাল-সন্ধ্যার ৫টি সহজ আমল ও ফজিলত — আত্মার প্রশান্তির পথে
প্রকাশিত: ৩০ জুন ২০২৫ | LikeTvBangla ইসলামিক বিভাগ
আমাদের ব্যস্ত জীবনে কখনো কখনো এমন ছোট কিছু কাজই হয়ে উঠতে পারে চিরস্থায়ী কল্যাণের পথ। ইসলাম আমাদের এমন অনেক আমলের শিক্ষা দেয়, যেগুলো অত্যন্ত সহজ, কিন্তু এর ফজিলত অপার। বিশেষ করে সকাল ও সন্ধ্যা—এই দুটি সময়কে ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করেছে।
এই সময়গুলোতে কিছু নির্দিষ্ট আমল করলে মন প্রশান্ত হয়, আত্মা আলোকিত হয় এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা লাভ করা যায়। আজ আমরা জানবো এমন পাঁচটি সহজ আমলের কথা, যেগুলো প্রতিদিন মাত্র ১০ মিনিট সময় দিলেই আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
১. আয়াতুল কুরসি পাঠ — নিরাপত্তার বর্ম
আয়াতুল কুরসি হলো কুরআনের একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ আয়াত, যা সূরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত। এই আয়াতের ফজিলত এত বেশি যে, ফজরের পর ও মাগরিবের পর একবার পাঠ করলেই আল্লাহ তায়ালা একজন ফেরেশতাকে নিযুক্ত করে দেন, যিনি সারাদিন বা সারারাত আমাদের রক্ষা করেন।
হাদীস: রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশে একমাত্র মৃত্যু ব্যতীত কোনো কিছু বাধা হবে না।” (নাসাঈ)
সকাল ও সন্ধ্যার সময় এটি পাঠ করলে মনেও এক ধরনের প্রশান্তি আসে। শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এটি এক অদৃশ্য ঢালস্বরূপ।
২. সূরা ফালাক ও সূরা নাস — জিন ও শয়তানের বিরুদ্ধে সুরক্ষা
এই দুটি সূরাকে মিলিয়ে বলা হয় ‘মুআউযাতাইন’। রাসূল (সাঃ) নিজেও সকাল ও সন্ধ্যায় এই সূরাগুলো পাঠ করতেন। এগুলোর মাধ্যমে জিন, শয়তান, হিংসা, কুদৃষ্টি ইত্যাদি অদৃশ্য ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ফজিলত: হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, “রাসূল (সাঃ) ঘুমের সময় এই দুই সূরা এবং সূরা ইখলাস পড়ে নিজের উপর ফুঁ দিতেন।” (বুখারী)
তিনবার করে পাঠ করে নিজের ওপর, সন্তানদের ওপর অথবা পরিবার-পরিজনের ওপর ফুঁ দিলে তা রুহানী সুরক্ষা দেয়।
৩. “হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল” — ভরসা রাখার দোয়া
এই দোয়াটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ যখন আমরা কোনো দুশ্চিন্তায় থাকি, বিপদগ্রস্ত হই অথবা কোনো সমস্যার মুখোমুখি হই। এটি কুরআনের একটি অংশ, যা সূরা আলে ইমরানের ১৭৩ নম্বর আয়াতে এসেছে।
উচ্চারণ: “হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল।”
অর্থ: “আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, আর তিনিই সবচেয়ে উত্তম অভিভাবক।”
প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় এই দোয়া ৭ বার করে বললে আল্লাহর উপর ভরসা দৃঢ় হয় এবং অন্তরে প্রশান্তি আসে।
৪. ১০০ বার “সুবহানাল্লাহ ওয়াবিহামদিহি” — পাপ মোচনের সোনার সুযোগ
এই তাসবীহটি ছোট হলেও এর প্রতিদান অনেক বড়। এটি পাঠ করলে শুধু আল্লাহর প্রশংসাই হয় না, বরং নিজের আত্মাকেও পবিত্র করা যায়।
হাদীস: রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি’ পড়বে, তার গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মতো হয়।” (বুখারী)
এটি একটি সহজ আমল, কিন্তু প্রতিদিন নিয়মিত পাঠ করলে আল্লাহর নিকট ক্ষমা লাভ সহজ হয় এবং হৃদয়ও দুনিয়ার চিন্তা থেকে মুক্ত হয়।
৫. ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ বারবার বলা — তওবা ও ক্ষমার দরজা খোলা
আমরা প্রতিদিন অসংখ্য ভুল করি, অনেক পাপ হয়ে যায় ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ বলার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই। এটি তওবার চাবিকাঠি।
অর্থ: “আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি।”
হাদীস: রাসূল (সাঃ) বলেন, “আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ৭০ বার বা তারও বেশি ইস্তিগফার করি।” (বুখারী)
এই ছোট্ট দোয়াটি কেবল মুখের বুলি নয়, বরং এটি হৃদয়ের খাঁটি অনুশোচনার প্রতীক। প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় অন্তত ১০০ বার করে ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ বলা চেষ্টা করুন।
🌙 উপসংহার — একটু সময়, চিরস্থায়ী ফল
প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যা এই দুটি সময় আমাদের জীবনে আত্মিকভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় বের করে এই আমলগুলো করি, তবে ইনশাআল্লাহ আমাদের জীবন বদলে যেতে পারে।
সেই সাথে আমাদের পরিবারকেও উৎসাহিত করতে পারি যেন সবাই মিলে এই ছোট ছোট আমলগুলো অভ্যাসে পরিণত করে। একটি আমলও যদি নিয়মিত করা যায়, তবুও সেটা আল্লাহর কাছে অনেক বড়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
“তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমি তোমাদের স্মরণ করবো।” (সূরা বাকারাহ: ১৫২)
আল্লাহ যেন আমাদেরকে এই সহজ আমলগুলো নিয়মিত করার তাওফিক দেন এবং তাঁর নৈকট্য অর্জনের সুযোগ করে দেন।
লেবেল: ইসলামিক, দোয়া, সকাল-সন্ধ্যা আমল, ইবাদত, আত্মিক প্রশান্তি