ইসলাম শান্তির ধর্ম: একটি অভিব্যক্তি
ইসলাম—শব্দটির শাব্দিক অর্থই হলো “শান্তি” এবং “আত্মসমর্পণ”। এটি শুধু একটি ধর্ম নয়, বরং একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যা মানুষের অন্তর, সমাজ, রাষ্ট্র এবং মানবজাতির সকল স্তরে ন্যায় ও শান্তির বার্তা পৌঁছে দেয়। আধুনিক বিশ্বে যখন সহিংসতা, বিভ্রান্তি এবং ঘৃণার আগুনে মানুষ জ্বলছে, তখন ইসলাম এমন এক পথ দেখায় যেখানে আছে ভালোবাসা, সহনশীলতা, মানবিকতা এবং অন্তরের প্রশান্তি।
📖 ইসলাম শব্দের তাৎপর্য
‘ইসলাম’ শব্দটি এসেছে আরবি “সালাম” শব্দ থেকে, যার অর্থ শান্তি। ইসলাম ধর্মের মূল ভিত্তি হলো আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ এবং তাঁর নির্ধারিত জীবনব্যবস্থার অনুসরণ করা। এই আত্মসমর্পণের মধ্যেই নিহিত রয়েছে প্রকৃত শান্তি।
কুরআনে বলা হয়েছে:
“যে ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করল এবং সে সৎকর্মশীল, তার জন্য তার প্রতিদান তার প্রভুর নিকট আছে। তার কোনো ভয় নেই, সে দুঃখিতও হবে না।”
— (সূরা আল-বাকারা, ২:১১২)
🕊️ রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন শান্তির দূত
আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন এমন একজন ব্যক্তিত্ব, যিনি শান্তি, ক্ষমাশীলতা ও সহনশীলতার আদর্শ স্থাপন করে গেছেন। মক্কাবাসীরা তাঁকে অপমান করেছে, পাথর ছুঁড়েছে, ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে, কিন্তু তিনি প্রতিশোধ নেননি।
তায়েফের ঘটনা তার বড় প্রমাণ। যখন তাঁকে তায়েফে পাথর মেরে রক্তাক্ত করা হয়েছিল, তখন ফেরেশতা এসে বলেছিলেন, “আপনি চাইলে আমি এই শহরের মানুষদের ধ্বংস করে দেব।” কিন্তু তিনি বললেন:
“আমি আশা করি, ভবিষ্যতে এদের বংশধরদের কেউ কেউ আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস করবে।”
এটাই ছিল ইসলামের শিক্ষা – ক্ষমা এবং ভবিষ্যতের কল্যাণের আশাবাদ।
🤝 ইসলাম ও সহনশীলতা
ইসলাম কোনো জাতি, ধর্ম বা ভাষাভিত্তিক বিভাজনের শিক্ষা দেয় না। বরং সকল মানুষকে একই পিতার সন্তান হিসেবে বিবেচনা করে – হযরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)।
কুরআনে বলা হয়েছে:
“হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অপরকে চেনো। নিশ্চয় আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাবান সেই ব্যক্তি যে সর্বাধিক পরহেজগার।”
— (সূরা হুজরাত, ৪৯:১৩)
এই আয়াত প্রমাণ করে ইসলাম মানুষকে বিচারের দৃষ্টিতে দেখে না, দেখে তার চরিত্র, নৈতিকতা ও আল্লাহভীতি কতটুকু।
⚖️ ইসলাম মানবাধিকারের অগ্রদূত
আজকের আধুনিক বিশ্বে মানবাধিকার নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও ইসলাম ১৪০০ বছর আগেই এমন কিছু অধিকার নিশ্চিত করেছিল যা আজও অনেক দেশ দিতে পারে না।
- নারীর অধিকার: ইসলাম নারীদের উত্তরাধিকার, শিক্ষা ও সম্মান দিয়েছে।
- দাসপ্রথা বিলুপ্তি: দাসমুক্তির জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে এবং ফিদিয়া হিসেবে দাস মুক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ আমল বলা হয়েছে।
- অসহায়ের সহায়তা: এতিম, বিধবা, গরীবদের পাশে দাঁড়ানো ইসলামি সমাজব্যবস্থার ভিত্তি।
রাসূল (সা.) বলেছেন:
“তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম যে অন্যদের জন্য ভালো।” — (তিরমিজি)
🛡️ ইসলামে জিহাদের প্রকৃত রূপ
জিহাদ শব্দটি বহুবার ভুল ব্যাখ্যার শিকার হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, “জিহাদ” মানে চেষ্টা বা সংগ্রাম – নফসের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, সমাজের শান্তি রক্ষার জন্য। এটা কোনভাবেই সন্ত্রাস বা সহিংসতার অনুমোদন দেয় না।
কুরআনে বলা হয়েছে:
“ধর্মে কোনো জবরদস্তি নেই।” — (সূরা বাকারা, ২:২৫৬)
ইসলাম কখনোই শক্তি প্রয়োগে ধর্ম প্রচারের অনুমতি দেয়নি বরং ন্যায়, যুক্তি ও হৃদয়ের আলোকে মানুষকে আহ্বান করতে বলেছে।
🧕 মুসলমান মানেই শান্তিপূর্ণ মানুষ
রাসূল (সা.) বলেছেন:
“সেই ব্যক্তি মুসলমান, যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।” — (বুখারী)
অর্থাৎ একজন প্রকৃত মুসলিম কখনো কারও ক্ষতি করে না – সে নিজে শান্তিতে থাকে এবং অন্যকে শান্তি দেয়। সে প্রতিবেশীর উপকার করে, পরিবারে সদাচরণ করে, সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে।
🌍 আধুনিক সমাজে ইসলামের শান্তির বার্তা
আজকের বিভাজিত বিশ্বে ইসলাম আমাদের শেখায়:
- ঘৃণার পরিবর্তে ভালোবাসা
- হিংসার পরিবর্তে সহমর্মিতা
- বিভেদের পরিবর্তে ঐক্য
- স্বার্থপরতার পরিবর্তে সমাজকল্যাণ
বিশ্ব যত প্রযুক্তি-নির্ভর হচ্ছে, মানুষ তত একা হয়ে পড়ছে। তখন ইসলাম আমাদের মনে করিয়ে দেয় – “মানুষ মানুষের জন্য, আল্লাহ সবার উপরে।”
✅ উপসংহার
ইসলাম শুধুমাত্র একটি ধর্ম নয়, এটি শান্তি, মানবতা ও কল্যাণের সম্পূর্ণ দিশা। একজন মুসলিম যদি প্রকৃত অর্থে ইসলামের শিক্ষা অনুসরণ করে, তবে সে হবে সমাজের শ্রেষ্ঠ মানুষ – ন্যায়পরায়ণ, দয়ালু, পরোপকারী এবং আন্তরিক।
আসুন, আজ আমরা সকলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ইসলামের এই শান্তির বার্তাকে হৃদয়ে ধারণ করি এবং তা সমাজে ছড়িয়ে দিই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে ইসলাম বুঝে চলার তাওফিক দিন। আমিন।
দায়িত্ব অস্বীকার: এই নিবন্ধটি সহীহ হাদীস, কুরআন ও প্রামাণ্য ইসলামি ব্যাখ্যার ভিত্তিতে লিখিত। এতে কোনও ভ্রান্ত, ঘৃণামূলক বা বিতর্কিত উপাদান নেই। পাঠককে উৎসাহিত করা হচ্ছে যেন তারা কুরআন ও সুন্নাহ সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী হন।