রাসূল (সঃ)-এর জীবনে দয়ার অনন্য দৃষ্টান্ত:
ইসলামের মহান প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছিলেন মানবজাতির জন্য রহমতস্বরূপ। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন: “আর আমি আপনাকে পাঠিয়েছি দুনিয়ার সকল জাতির জন্য রহমতস্বরূপ।” (সূরা আম্বিয়া: ১০৭)
রাসূল (সঃ)-এর দয়া, সহানুভূতি ও ক্ষমার মনোভাব শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য ছিল। তাঁর জীবনে এমন বহু ঘটনা রয়েছে, যা আজও বিশ্ববাসীর জন্য অনুকরণীয় আদর্শ।
১. তায়েফের ঘটনা
রাসূল (সঃ) যখন তায়েফে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে যান, তখন সেখানকার লোকেরা তাকে শুধু প্রত্যাখ্যানই করেনি, বরং পাথর ছুড়ে আহত করে শহর থেকে বের করে দেয়। এমনকি তার পা থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। তখন জিবরাঈল (আঃ) এসে বললেন, “আপনি আদেশ করুন, আমি পাহাড়দ্বয় চাপা দিয়ে পুরো তায়েফ ধ্বংস করে দেব।” কিন্তু রাসূল (সঃ) বললেন, “না, আমি চাই যে এদের পরবর্তী প্রজন্ম আল্লাহকে চিনে ঈমান আনবে।” — এটি দয়ার চূড়ান্ত উদাহরণ।
২. উহুদের যুদ্ধের পরে
উহুদের যুদ্ধে কাফিররা রাসূল (সঃ)-এর দান্ত ভেঙে ফেলে, শরীর রক্তাক্ত করে দেয়। সাহাবিরা প্রতিশোধ নিতে চাইলে তিনি তাদের থামিয়ে দেন। তিনি শুধু বললেন, “হে আল্লাহ! আমার কওমকে হেদায়েত দাও, তারা জানে না।”
এমন ক্ষমাশীলতা একজন সত্যিকারের নবীর পরিচয় বহন করে।
৩. মদিনায় প্রতিবেশী ইহুদি বৃদ্ধা
মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পর এক ইহুদি বৃদ্ধা নিয়মিত রাসূল (সঃ)-এর পথে আবর্জনা ফেলত। একদিন তিনি আবর্জনা ফেলেননি। রাসূল (সঃ) খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, তিনি অসুস্থ। তিনি বৃদ্ধার বাসায় গিয়ে সেবা করলেন। এতটুকু মানবতা দেখে সেই ইহুদি বৃদ্ধা ইসলাম গ্রহণ করলেন।
৪. বন্দীদের সাথে আচরণ
বদর যুদ্ধের পর মুসলিমদের হাতে যে কুফরি বন্দীরা আসে, রাসূল (সঃ) নির্দেশ দেন তাদের সঙ্গে সদয় আচরণ করতে। এমনকি অনেক সাহাবি নিজের খাবার দিয়ে বন্দীদেরকে খাওয়াতেন। ইসলামে যুদ্ধজয় করেও দয়া দেখানোর এমন নজির বিরল।
৫. রাসূল (সঃ)-এর দয়া পশুর প্রতিও
রাসূলুল্লাহ (সঃ) শুধু মানুষের জন্য নয়, পশু-পাখির প্রতিও ছিলেন দয়ালু। একবার এক উটের ওপর অত্যাচার হতে দেখে তিনি বললেন, “এদের মুখ বন্ধ করে তাদের সৃষ্টিকর্তার রিজিক থেকে রোধ করো না। ওদের প্রতি দয়া করো, যেন আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করেন।”
---
উপসংহার
রাসূল (সঃ)-এর জীবন ছিল দয়া, ক্ষমা, সহানুভূতি ও ভালোবাসার এক জীবন্ত উদাহরণ। তিনি শিখিয়েছেন কিভাবে শত্রুকেও ভালোবাসা দিয়ে জয় করা যায়। তার জীবনের এই শিক্ষা শুধু মুসলমানদের নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য শান্তির বার্তা।
Hi
ReplyDelete