আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট বিধ্বস্ত: ২৪১ জন নিহত, বেঁচে আছেন মাত্র একজন
আহমেদাবাদ, ১২ জুন ২০২৫ — ভারতের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হলো এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট AI 171। বোয়িং ৭৮৭–৮ ড্রিমলাইনার মডেলের বিমানটি আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২৪১ জন যাত্রী ও ক্রু সদস্য, বেঁচে আছেন মাত্র একজন।
![]() |
বিমানে ২৪২, জীবিত ১ |
কীভাবে ঘটল এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা?
দুপুর ১:৩৮ মিনিটে ফ্লাইট AI 171 আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। তবে উড্ডয়নের মাত্র ৩০–৬০ সেকেন্ডের মধ্যেই বিমানটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ভারসাম্য হারিয়ে নিচে নেমে আসে এবং শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত BJ মেডিকেল কলেজ–এর হোস্টেল ও আবাসিক ভবনের ওপর ভেঙে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, “বিমানটি ঘোরাঘুরি করছিল। হঠাৎ বিকট শব্দ হলো, মনে হচ্ছিল ভূমিকম্প হয়েছে।” দুর্ঘটনার সময় মাটিতে থাকা অনেক বাসিন্দাও হতাহত হয়েছেন।
নিহত ও বেঁচে যাওয়ার তথ্য
বিমানটিতে মোট যাত্রী ও ক্রু ছিল ২৪২ জন। তাদের মধ্যে ২৪১ জন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। শুধু মাত্র একজন, বিশ্বাশকুমার রমেশ নামের ৪০ বছর বয়সী এক ব্রিটিশ-ভারতীয় নাগরিক অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। তিনি জরুরি জানালা দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণ বাঁচান এবং বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
দুর্ঘটনার ফলে ভূপৃষ্ঠে থাকা অন্তত ২৮ জন স্থানীয় বাসিন্দাও মারা গেছেন, এবং আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।
উদ্ধার অভিযান ও তদন্ত শুরু
ঘটনার পরপরই NDRF, NSG, IAF এবং স্থানীয় দমকল বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। NSG কমান্ডোরা বিমানের ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করেছে, যা তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ভারতের Aircraft Accident Investigation Bureau (AAIB) তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে। এই তদন্তে অংশ নিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের NTSB, FAA, Boeing ও GE Aerospace–এর প্রতিনিধিরাও।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই দুর্ঘটনাকে “গভীর হৃদয়বিদারক” বলে উল্লেখ করে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং আহতদের চিকিৎসা ও সহায়তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন।
ব্রিটেনের রাজা চার্লস III, প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, সহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা ভারতের পাশে থাকার বার্তা পাঠিয়েছেন।
Boeing ও GE–এর বিবৃতি
Boeing এবং GE Aerospace যৌথভাবে এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে এবং তদন্তে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা বজায় রাখবে। তারা এই ঘটনার জন্য গভীর শোক প্রকাশ করেছে।
উপসংহার
এই দুর্ঘটনা কেবল ভারতের নয়, গোটা বিশ্বের কাছে একটি সতর্ক সংকেত। প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক, বিমানে যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কখনোই হালকাভাবে নেওয়া যায় না। একমাত্র জীবিত যাত্রী বিশ্বাশকুমার রমেশের অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া যেমন অবাক করে, তেমনি বাকিদের মৃত্যু জাতিকে শোকাচ্ছন্ন করে তুলেছে।
আমরা নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করি এবং আশা করি, এই দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য আরও উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।