ভারতের আবহাওয়া আপডেট – ২৭ জুন ২০২৫
২৭ জুন ২০২৫, শুক্রবার – ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বর্ষার প্রভাব আজ ছিল অত্যন্ত প্রকট। দেশের দক্ষিণ, পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত এবং দমকা হাওয়ার কারণে জনজীবনে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। আবার কিছু অঞ্চলে আজও তীব্র গরম এবং আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি বজায় ছিল। দিনভর সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি ও বজ্রঝড় দেখা গেছে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, আসাম, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র এবং কেরালায়। আজকের আবহাওয়া কার্যক্রমে বর্ষার অগ্রগতি স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
🌦️ সারাদিনের আবহাওয়ার সারাংশ
- 🌧️ বর্ষা সক্রিয়: পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলে প্রবল বর্ষণ।
- 💨 দমকা হাওয়া: উপকূলীয় অঞ্চলে ঘণ্টায় ৫০–৬৫ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া।
- ⚡ বজ্রঝড়: পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ওড়িশার কয়েকটি জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ ঝড়ো বৃষ্টি।
- 🌡️ তাপমাত্রা পার্থক্য: পশ্চিম ভারতের বেশ কিছু জায়গায় এখনও তীব্র গরম বজায়।
📍 অঞ্চলভিত্তিক বিশ্লেষণ
🗺️ পশ্চিমবঙ্গ
কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আজ সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা ছিল। দুপুর ১টার পর থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়, সঙ্গে ছিল দমকা হাওয়া ও হালকা বজ্রপাত। কলকাতার বেহালা, গড়িয়াহাট, ও সল্টলেক অঞ্চলে জল জমে যায়। রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে যেমন মালদা, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে ভারী বৃষ্টি হয়েছে বিকেলের দিকে।
🌾 বিহার ও ঝাড়খণ্ড
বিহারের পাটনা, ভাগলপুর এবং গয়া অঞ্চলে মাঝারি বৃষ্টি হয়েছে। যদিও দিনভর গরম এবং আর্দ্রতা ছিল কষ্টদায়ক। ঝাড়খণ্ডের রাঁচি ও ধানবাদে সকালবেলার দিকে বজ্রঝড়ের সম্ভাবনা থাকলেও মূলত সন্ধ্যার পর বৃষ্টি শুরু হয়।
☔ ওড়িশা
পুরী, ভুবনেশ্বর এবং গঞ্জামে সকালের দিকে কিছুটা রোদ থাকলেও দুপুরের পর থেকেই ভারী বর্ষণ শুরু হয়। স্থানীয় নদীগুলোর জলস্তর বৃদ্ধি পায়। উপকূলীয় মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
🌧️ উত্তর-পূর্ব ভারত
আসামের গৌহাটি, তেজপুর, ডিব্রুগড় সহ বিভিন্ন অঞ্চলে দিনভর টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে। মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডেও বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি হালকা ভূমিধসের খবর পাওয়া গেছে। শিলংয়ে দুপুর ১২টার সময় এক ঘণ্টায় ৩২ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।
🌿 দক্ষিণ ভারত
কেরালা, কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর পশ্চিম অংশে বর্ষা সক্রিয় রয়েছে। কেরালার কোচি ও ত্রিভান্দ্রামে সকাল থেকেই ভারী বৃষ্টি হয়েছে। কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুতে মেঘলা আকাশ ও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত দিনের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়।
🔥 পশ্চিম ও মধ্য ভারত
মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ, মধ্যপ্রদেশের ভোপাল ও গুজরাটের আহমেদাবাদে এখনও তাপমাত্রা ৩৯°–৪১°C পর্যন্ত উঠেছে। বৃষ্টির সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম। তবে আগামী ২–৩ দিনের মধ্যে বর্ষার অগ্রগতি এসব এলাকায় শুরু হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে IMD।
🛰️ স্যাটেলাইট ও রাডার তথ্য
INSAT-3D স্যাটেলাইটের চিত্র অনুযায়ী আজ বঙ্গোপসাগর থেকে উত্তর দিকে ঘন বর্ষাসঞ্চার প্রবাহিত হয়। মৌসুমি বায়ু সক্রিয়ভাবে মহারাষ্ট্র, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। আরব সাগরের দিক থেকে আসা জলীয়বাষ্প দক্ষিণ ভারতে প্রবল বর্ষণের পরিবেশ তৈরি করেছে। পূর্ব ভারতের উপরে থাকা নিম্নচাপ অঞ্চল আজকের বৃষ্টিপাতের একটি বড় কারণ।
🌡️ তাপমাত্রার পার্থক্য
শহর | সকাল (°C) | বিকাল (°C) | বৃষ্টিপাত (মিমি) |
---|---|---|---|
কলকাতা | 30.2 | 27.1 | 41.5 |
গৌহাটি | 28.5 | 25.4 | 56.8 |
ত্রিভান্দ্রাম | 29.8 | 26.6 | 62.3 |
ভুবনেশ্বর | 32.0 | 28.0 | 39.2 |
আহমেদাবাদ | 34.6 | 41.1 | 0.0 |
📢 সতর্কতা ও জনসাধারণের জন্য নির্দেশনা
- ⚠️ বজ্রপাতের সময় খোলা স্থানে অবস্থান করবেন না।
- ⛔ নদী ও সমুদ্রের কাছে গেলে সাবধান থাকুন, বিশেষ করে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে।
- 🚫 ভারী বৃষ্টির সময় বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্রপাতি ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
- 🧒 শিশু ও বয়স্কদের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
🎙️ আবহাওয়াবিদদের মন্তব্য
ড. তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, IMD পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান:
“এই বর্ষা মৌসুমে পূর্ব ভারতের উপরে একাধিক নিম্নচাপ গঠিত হচ্ছে, যা সাধারণ মৌসুমি গতিপথের চেয়ে বর্ষাকে আরও সক্রিয় করে তুলছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা অনেক জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।”
🌧️ বর্ষার অগ্রগতি – কোথায় পৌঁছেছে?
মৌসুমি বায়ু ইতিমধ্যে কেরালা, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ অংশে প্রবেশ করেছে। আগামী ২–৩ দিনের মধ্যে এটি বিহার, উত্তর প্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশেও ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। দিল্লি ও উত্তর ভারতের কিছু অঞ্চলে এখনও বর্ষার প্রবেশ হয়নি, তবে ১ জুলাইয়ের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে।
✅ উপসংহার
২৭ জুন ২০২৫-এর আবহাওয়া চিত্র ছিল বর্ষার জন্য একদম উপযুক্ত। দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে ভারী থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত, ঝড়ো হাওয়া এবং বজ্রঝড়ের মধ্য দিয়ে দিন কেটেছে। বর্ষা তার ধাপে ধাপে অগ্রগতি চালিয়ে যাচ্ছে এবং কৃষিকাজের জন্য এটি একটি ইতিবাচক দিক। তবে বজ্রপাত ও জলাবদ্ধতা সংক্রান্ত ঝুঁকির জন্য সকলকে সতর্ক ও সচেতন থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
দায়িত্ব অস্বীকার: উপরের তথ্যগুলি সরকারি ও বিশ্বস্ত উৎস, যেমন IMD এবং স্থানীয় সংবাদ রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রস্তুত। এটি কল্পনাপ্রসূত নয় এবং শুধুমাত্র তথ্যভিত্তিক উপস্থাপন। জরুরি পরিস্থিতিতে দয়া করে স্থানীয় প্রশাসনের পরামর্শ মেনে চলুন।